বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৮ অপরাহ্ন
সম্পাদকীয়
করোনা সংক্রমণের ৬ষ্ঠ দিনেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্ঘিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে। বিধিনিষেধ আরোপের পাঁচদিন অতিবাহিত হয়েছে, অথচ প্রায় সবার মধ্যেই দেখা গেছে উদাসীনতা।
ওদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখভাল করার দায়িত্ব রয়েছে যাদের ওপর, তারাও ছিলেন এক প্রকার নির্বিকার। কারও মধ্যেই নেই যেন কোনো মাথাব্যথা। সবকিছুই আগের মতো স্বাভাবিক চলছে যেন। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, কাঁচাবাজার ও মহল্লার দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে মানুষের জটলা, যেখানে ছিল না সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই, মাস্কও ছিল না অনেকের মুখে।
গণপরিবহণ ব্যাপকভাবে চলেছে, অথচ মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। যাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ করা দূরের কথা, অনেক যাত্রী মাস্কও ব্যবহার করেনি। এমনটাই যখন পরিস্থিতি, তখন গতকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে শপিংমল ও দোকানপাট।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল ও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে প্রবণতা, তাতে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, শপিংমলগুলোতেও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূরের কথা, সাধারণ ভয়ও কাজ করছে না। মনে হচ্ছে, তারা সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এ ধরনের চিন্তা বিপজ্জনক বটে। প্রথমত, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বর্তমান যা হাল, তাতে বর্তমান ক্রমবর্ধমান সংক্রমণজনিত রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অক্সিজেন ও আইসিইউ’র জন্য হাহাকার উঠেছে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে। দ্বিতীয়ত, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি না মানলে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। বর্তমানে সংক্রমণের হার ২০-২১ শতাংশ। এই হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করবে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড ভেঙে ভেঙে বেড়েই চলেছে। সবটা মিলিয়ে দেশ অতিক্রম করছে এক দুঃসহ সময়।
আমরা বারবার বলে এসেছি, করোনার বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। মাস্ক পরিধান, ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, টিকা নেওয়া এবং বেশি বেশি করোনা পরীক্ষা করা-এসব বিধি মেনে চললে করোনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এবং একইসঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। মাস্কের দাম সব শ্রেণির মানুষের জন্যই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে; দ্বিতীয়ত, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভরশীল। ঘন ঘন হাত ধোয়ার জন্য যে পরিমাণ সাবানের প্রয়োজন তা-ও মহার্ঘ নয়। সুতরাং এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না যে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে না।
যারা স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের নির্দেশনাগুলো মানছেন না, তাদের এই উপলব্ধি থাকতে হবে যে, তিনি শুধু নিজের বিপত্তিই ডেকে আনছেন না, অন্যদেরও ফেলছেন ঝুঁকিতে। এটা নিশ্চয়ই কোনোভাবেই নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না।
তাই আমরা আশা করব, সবাই সম্বিৎ ফিরে পাবেন এবং শতভাগ আন্তরিকতা ও সচেতনতায় এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। অন্যথায় দেশ অচিরেই নিপতিত হবে উত্তরণঅযোগ্য মহাসংকটে।
Leave a Reply