বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
মো. আলমগীর হোসেন:
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবীরাও এ থেকে বাদ যাচ্ছে না। বর্তমানে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মার্টনেসে পরিণত হয়েছে।
তরুণরাই ভবিষ্যৎ যুগের নির্মাতা। তাই তরুণ সমাজকে ধূমপানমুক্ত করতে হবে। তরুণ সমাজ সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে সুখ খোঁজে। কোনো ব্যক্তির মাদক জীবনের শুরু হয় ধূমপানের মধ্য দিয়ে এবং ধীরে ধীরে বিভিন্নরকম মাদকদ্রবের প্রতি আকৃষ্ট হয় সে। এভাবে ধ্বংস হয় দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ।
অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘ধূমপান করলে কোনো ক্ষতি হয় না, অনেকেই তো দেখি বছরের পর বছর ধূমপান করছে, তাদের তো কোনো ক্ষতি হয় না।’ এমন কথাও বলতে শোনা যায়, ‘ধূমপান করে তো কাউকে মরতে দেখিনি।’
আসলে ধূমপানের কারণে কে কে হাসপাতালে গেল সে খবর ক’জন রাখে? ধূমপানে যেহেতু সরাসরি দৃশ্যমান কোনো ক্ষতি নেই, তাই ধূমপানকে তেমন কোনো ক্ষতিকারক বলে মনে করে না তরুণ সমাজ। তাই তারা আসক্ত হয় ধূমপানে। কম বয়সে উত্তেজনা বেশি থাকে। ফলে কৌতূহলবশত একবার সিগারেট হাতে নিলে এরপর আর পিছপা হতে পারে না।
নারীদের মধ্যেও ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে। বিভিন্ন অভিজাত এলাকার রেস্তোরাঁ, ধানমণ্ডি ও গুলশান লেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধূমপান করার দৃশ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে। ধূমপান মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়, পরিবেশ দূষণ করে। ধূমপায়ীর আশপাশের অধূমপায়ীরাও ধূমপানজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ধূমপায়ীদের অর্ধেক ১৩-১৫ বছর বয়সী। ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের ধূমপানের হার দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২৫.৪ শতাংশ। আইনে ১৮ বছরের নিচে কারও কাছে তামাক পণ্য বিক্রি দণ্ডনীয় হলেও এ ক্ষেত্রে কোনো মনিটরিং নেই। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানে প্রকাশ্যে তামাকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে সেখানে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। কোনো পর্যটক যদি সেদেশের পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে, তাহলে জরিমানাসহ ক্ষেত্রবিশেষে তার ভিসা বাতিল করে দেয়া হয়।
আট লাখ অধিবাসীর দেশ ভুটান কঠোরভাবে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বিপুল অর্থ বেঁচে যাচ্ছে তাদের। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে ধূমপানের পেছনে।
ধূমপান ত্যাগের জন্য দরকার যুবসমাজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ধূমপান প্রতিরোধের জন্য এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে : ১. ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে তরুণ সমাজকে সচেতন করা; ২. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো মিডিয়ায় তুলে ধরা; ৩. পরিবারে অভিভাবক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সচেতনতা, যাতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ ধরনের অভ্যাস তৈরি না হয়; ৪. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় সিগারেট ক্রয়-বিক্রয় ও ধূমপান নিষিদ্ধ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; ৫. মাদক, মাদকের উৎস এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা।
মো. আলমগীর হোসেন : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply