শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

পরীমণির সঙ্গে সম্পর্ক আছে আমারও

পরীমণির সঙ্গে সম্পর্ক আছে আমারও

ঠিক মনে নেই, হয়তো ১৯৯৭ কিংবা ৯৮ সালের কথা। ঢাকায় এসেছিলাম আমার পত্রিকা অফিসে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে সায়দাবাদ বাস স্টেশনে যাত্রীসেবা বাসে উঠলাম। জানালার পাশের এক সীটে বসে আছি। বাসে অনেক সীট খালি। যাত্রীর অপেক্ষায় বাসটি সামনে পেছনে গজরাচ্ছে। এসময় এক হকার গাড়ির জানালায় হাত উঁচু করে বললো ভাই নিবেন? সময় পার করতে পারবেন- দারুণ জিনিস। আমিও তখন খবরের ফেরিওয়ালা। তাও আবার কাজ করি ইন্সারজেন্সি এরিয়ায়। তাই দারুণ খবর আর ছবি দেখে আগ্রহ বেড়েছে। একটা ম্যাগাজিন হাতে নিতেই হকার বললো খুলতে পারবেন না। আগে কিনেন, তারপর চুপচাপ খুলবেন। তার কথামতোই আগে কিনলাম।
ম্যাগাজিনটির প্রথম এবং শেষ প্রচ্ছদ বাদে ভেতরের পাতাগুলো দুইভাঁজে স্টাপলার পিনে আবদ্ধ। দুই প্রচ্ছদেই রগরগে শিরোনাম আর ছবি জ্বলজ্বল করছে। ম্যাগাজিনটির নামও ঠিক মনে করতে পারছি না। স্বর্ণালি বা রুপালি কিছু একটা হবে। দুই অভিনেত্রীকে নিয়ে অশ্লীল ইঙ্গিতের শিরোনাম আর বয়েসী কাতরতা আমাকে ম্যাগাজিনটি কিনতে প্রভাবিত করলো। পাশে যাত্রী থাকায় স্টাপলার পিন খুলেও রগরগে খবর মেলেধরে পড়তে পারছিলাম না। গাড়ি ছেড়ে কিছুদূর এগুতেই পাশের যাত্রী ঘুমঘুম ভাবে আচ্ছন্ন। তখন পটাপট চোখ বুলাতে গিয়ে পুরো শরীরে বিদুৎ চমকালো আমার!! একি! আমার প্রিয় নায়িকা! যার সিনেমা আমার এলাকায় গেলে মিস করি না কখনোই। যাকে প্রায়ই কল্পনা করি বিভিন্ন রঙে-ঢঙে। সেই নায়িকার নগ্ন ছবি দেখে মিনিট তিনেক থমকে ছিলাম।
এরপর মন বলে উঠলো- নায়িকারা মনে হয় এমনি হয়। অদৃশ্য চেহারার নায়কের কোলে আমার প্রিয় নায়িকা আদিম সুখে ত্রিশূলভাঁজে লেপ্টে আছেন।
প্রথম দর্শনে মন বিগড়ে গেলেও আবারো ছবিটি দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তারপর কয়েকবার দেখলাম।
এরপর পাতা উল্টিয়ে ম্যাগাজিনের মাঝামাঝি পেলাম আরেক নাট্যাভিনেত্রীর অশ্লীল ছবি। দেশিয় এক খল নায়কের কোলে নগ্ন শরীরে বসে আছেন তিনি। ( ভেতরের পাতার সব ছবিই সাদাকালো) সুন্দরী অভিনেত্রীর এমন ছবি দেখে দেহমনে যা হবার তা তো বুঝতেই পারছেন।
একদিনের পথ পেরিয়ে বাড়ি গিয়ে বিশ্রামের সঙ্গী হলো ম্যাগাজিনটি। মনের তাড়া- সবার আগে ওই ছবির খবর পড়তেই হবে। পড়ে দেখলাম খবরের সঙ্গে ছবির কোনো সম্পর্ক নেই। বিদেশি বিনোদনের খবরে দেশি নায়িকাদের অশ্লীল নগ্নছবি!
সাংবাদিকতায় আমি তখন বছর দু-তিনেক। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দুএকজন সহকর্মীর সঙ্গে গোপনে শেয়ার করলে তারাও ম্যাগাজিনটি দেখতে চাইলেন। দেখালাম। তারা বললেন, আর যাই হোক ছবি কি মিথ্যা? হ্যাঁ ঠিকই তো, ছবিতো আর মিথ্যে না!, ( ওই ছবি যে মিথ্যা বা এডিট করা, তা আমরা জেনেছি আরো বছর কয়েক পর) তখন ফটোসপ ফটোএডিট এসব কিছুই আমাদের নাগালে ছিল না। শুধু আমরা নই, রাজধানী ছাড়া দেশের কোথাও ওই প্রযুক্তি ছিল না।
ওই ম্যাগাজিন দেখার পর থেকে নায়িকা বা অভিনেত্রীদের প্রতি আমার ভিন্ন ধারণা তৈরি হয়, আমার মত এ দেশের অনেকেরও। কারণ এসব ম্যাগাজিন গোপন ঢঙে বিক্রি হয়ে চলে গেছে লক্ষ লক্ষ পাঠকের অন্ধকার কর্ণারে। কিন্তু পাঠক যা দেখেছিলো তার কোনোটাই ঠিক নই। অথচ প্রযুক্তিজ্ঞানের অজ্ঞতায় দুই অভিনেত্রীকে নিয়ে ঘৃণা তৈরি হয়েছে সেসব মানুষের মনে- যারা ওই ম্যাগাজিন দেখেছেন পড়েছেন।
দুই নারীর চেহারা পুঁজি করে ভিনদেশী নীল ছবিতে লাগিয়ে ব্যবসা করেছেন এ দেশের কথিত অভিজাত নষ্ট পুরুষেরা। অথচ সেসব নষ্ট পুরুষের চেহারা দেশের মানুষ কখনোই দেখেনি!
যে দুই অভিনেত্রীর ছবি ছাপা হয়েছিলো তাঁদের একজন প্রয়াত এবং একজন বছরখানেক পুর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
এদেশে যারা রূপ বেচে, দেহ বেচে তাদের পতিতা বলে, কিন্তু যারা কিনে, ব্যবসা করে তাদের কি বলে? সেই শব্দটি অভিধানে নেই। এর কারণও পুরুষতান্ত্রিকতা।
ম্যাগাজিনের মলাট আর ভেতরের পাতায় বিদেশি নারীর নগ্ন ছবিতে পরীদের চেহারা লাগিয়ে এ দেশের কথিত অভিজাতরাই ব্যবসা করেছেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন। এসব নষ্ট পুরুষের চেহারা দেশের আইন, সমাজ বা রাষ্ট্র একবারও দেখেননি? নিশ্চয়ই দেখেছেন। তবে পুরুষতান্ত্রিকতাই তা আড়াল করে রেখেছে।
আজকের পরীমনি যাদের সৃষ্টি তাদের চেহারা এখনো সামনে আসছে না কেন? এটার কারণও একটাই। পুরুষতান্ত্রিকতা। রাতের অন্ধকারে পরীদের আদর সোহাগ করবেন, সামান্য এদিকসেদিক হলে দিনের আলোতে বিচার বসাবেন। বিচারকও আপনিই।
পরীর দুর্ভাগ্য। সে উঁচু ডালে দোল খেয়েছে। জ্ঞান আর বুদ্ধিস্বল্পতায় বেপরোয়া হয়েছে। উঁচু ডালে চড়তে পেরে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেছে। এজন্যই রাতের রাজাদের ঘুম হারাম হয়েছে- কখন আবার কাকে নিয়ে কোন কান্ড ঘটায়, কি বলে ফেলে।
বেপরোয়া পরীকে যেমনি পাকড়াও করা হয়েছে, তেমনি যারা রসদ মদদ আর গাওয়া ঘি দিয়ে পরীদের তৈরি করেছেন তাদেরকেও সমাজের আয়নায় প্রদর্শন করা হোক।
এমন একটি কচি কোমল সুন্দরী পরীর জন্য এদেশের লাখো কোটি মানুষের মত আমারও মন কাঁদে। ছোট থেকে অভিভাবকহীন হয়ে বেড়ে ওঠা মেয়েটির যে বোধবুদ্ধি একেবারেই কম তা তার দু- একটি লাইভ দেখেই বুঝতে পেরেছি। যেটা এই সমাজের কাছে অশোভন সেটাকে সে স্বাভাবিক ভাবতেই শিখেছে। পরীকে সঠিক পথে পরিচালনার অভিভাবক থাকলে আজ হয়তো এই গ্যাঁড়া কলে আটকা পরতো না।
এই সমাজ যদি বলে- পরী অশুদ্ধ হয়েছে, তাহলে তাকে শুদ্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হোক। কারণ পরীদের জন্য মন কাঁদে। আমিও পরীর প্রেমে পরেছি। আর যারা এখনো শতশত পরী এই শহরের ফ্লাটে ফ্লাটে তৈরি করে চলেছেন তাদের মুখোশ উম্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

লেখক: ওমর ফারুক শামীম, প্রধান সম্পাদক, বিবর্তনবিডি

ভাল লাগলে সংবাদটি শেয়ার করুন........

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদিত... © কর্তৃপক্ষদ্বারা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত |২০২০|
Design & Developed BY CHT Technology