বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

রামগড়ে সমাহিত শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম এর আজ ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী

রামগড়ে সমাহিত শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম এর আজ ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী

করিম শাহ, রামগড় প্রতিনিধি:  ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের ইকবাল পার্বত্যাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাকবাহিনীর সাথে এক সম্মুখযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের ইকবাল শহীদ হন।
১৯৪৭ সালের ২ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে তার জন্ম। তবে পৈতৃক গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার (তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী) রামগঞ্জ থানার টিওড়া গ্রামে। তার বাবা মরহুম আব্দুল কাদের ছিলেন ইংরেজ আমলের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৬৬ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে তিনি ইংরেজিতে স্মাতকে (সম্মান) ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের এই অকুতোভয় বীর সেনা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের ইকবাল ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে আর্টিলারি কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭০ সালে হায়দ্রাবাদ ক্যান্টনমেন্টে ৪০ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন।
ভালোবেসে ১৯৭১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খালাতো বোন জুলিয়াকে বিয়ে করেন। কয়েক দিন পর আনুষ্ঠানিক জীবন শুরু করবেন তারা। কিন্তু তার আগেই জন্মভূমিতে নেমে এলো মানব ইতিহাসের বেদনাদায়ক ২৫ মার্চের কালরাত। ওইরাতে পুরনো ঢাকার ফরিদাবাদে পৈতৃক বাড়িতে ছিলেন তিনি।
এক দিকে নববধূ। অপরদিকে জন্মভূমির স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকারের প্রশ্ন। এক দিকে জীবন। অন্য দিকে মৃত্যু। যুগের এমনই সন্ধিক্ষণে তিনি বেছে নিয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপক্ষে অস্ত্র হাতে মৃত্যুর পথকেই। ২৭ মার্চ ১৯৭১ জন্মভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাব, ফরিদাবাদ বাসা থেকে চট্টগ্রামের পথে বেরিয়ে পরেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে দিনের পর দিন নিরীহ বাঙালির ওপর পাকবাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও গণহত্যার প্রত্যক্ষ বিবরণ শুনে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে বদ্ধঘরে স্থির থাকতে পারেনি এই অফিসার। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার দৃঢ় প্রত্যয়ে ২৮ মার্চ মাকে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে যুদ্ধে অংশ নিতে চট্টগ্রামের পথে বেরিয়ে আসেন। পরে শুভপুর যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর সাথে যোগ দেন। ২ এপ্রিল রাতে ক্যাপ্টেন কাদের সীমান্ত শহর রামগড়ে পদার্পণ করে মেজর জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১ নম্বর সেক্টরে যোগদান করে শুরু করেন শত্রু মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধ।
১০ এপ্রিল মেজর জিয়া, লে. খালেকুজ্জামানসহ ক্যাপ্টেন কাদের ৫০ জনের একটি গ্রুপের সাথে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রামগড় ত্যাগ করেন। তিনি মহালছড়ি, রাঙ্গামাটি ও মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করে ওই এলাকাগুলোকে শত্রুমুক্ত করেন।
২৭ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মহালছড়িতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগী মিজোবাহিনীর শত্রুরা ছিল দলে বেশি। তাদের দলে ছিল পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কম্পানি। আরো ছিল দুই ব্রিগেডে ১৫ শ’ মিজো সৈন্য। যা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার চেয়ে দু-তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া বিমান থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালায় পাকবাহিনী। তবুও অসীম সাহসিকতা নিয়ে বীর যোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যান। এ সময় ক্যাপ্টেন কাদের ছিলেন রাঙ্গামাটি রেকিতে। রেকি শেষে মেজর শওকতের প্ল্যান অনুযায়ী ক্যাপ্টেন কাদের যোগ দেন মহালছড়ির এ অসম যুদ্ধে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ অকুতোভয় তরুণ বীর যোদ্ধার সাহস ও সম্মিলিত প্রতিরোধে মিজোবাহিনী প্রথম অবস্থায় পিছু হটতে শুরু করে। তখন পাক সৈন্যরা পেছন থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের সামনে অগ্রসর হতে বাধ্য করে।
এ অবস্থায় মিজোরা হিংস্র হয়ে উঠে। তারা প্রায় চার দিক থেকেই ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রচণ্ড যুদ্ধের একপর্যায়ে শত্রুদের মেশিনগানের একটি গুলি এসে বিঁধে বীর তরুণ ক্যাপ্টেন কাদেরের বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এ সময় সহযোদ্ধা শওকত আলী ও ফজলুর রহমান ফারুক আহত কাদেরকে উদ্ধার করে রামগড়ে নিয়ে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
২৮ এপ্রিল ভোরে রামগড় কেন্দ্রীয় কবরস্তানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাকে। ওই যুদ্ধে নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রায় ২০০ মুক্তিসেনার জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করেছেন ক্যাপ্টেন কাদের। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অতুলনীয় বীরত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন তাকে।

ভাল লাগলে সংবাদটি শেয়ার করুন........

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদিত... © কর্তৃপক্ষদ্বারা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত |২০২০|
Design & Developed BY CHT Technology