বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
করিম শাহ, রামগড় প্রতিনিধি:: যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়েনে অভাবে প্রকৃতিক সৌন্দর্যের রাণী পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পর্যটন খাত ভেংগে পড়েছে। খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলার পর্যটন শিল্পে রামগড়ের সৌন্দর্যের সু-খ্যাতি ছিলো সর্বত্র। অথচ একটু উদ্যেগী হলে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে রামগড়ের হারানো পর্যটন খাত।
এ জেলার রামগড়ের সাথে জড়িয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ইতিহাস, দুর্গম পাহাড়, সবুজের সমারোহ, সাজানো চা বাগান, রামগড় লেক, ঝুলন্ত সেতু, পাহাড়ঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু, বিজিবির জন্মস্থান, শহীদ মিনার, পুরাতন এসডিও ডাক বাংলো, কলসীর মুখ, সুইচ গেইট সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এক সময় রামগড়ে পর্যটকদের ভিড লেগে থাকতো, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়মিত পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকতো রামগড় শহর অথচ সম্ভাবনাময় এসব স্থাপনার উন্নয়নে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় ধসে পড়েছে রামগড়ের পর্যটন শিল্প। এতেকরে কর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বঞ্চিত হচ্ছে এ এলাকার সর্বসাধারণ।
সরেজমিনে রামগড় পার্ক, স্মৃতিসৌধ, ঝুলন্তব্রীজ, কালাডেবা সুইসগেইট এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব পর্যটন কেন্দ্র সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পর্যটকদের জন্য কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। বছর দশেক আগেও বিশাল আকাশের নিচে চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালির শ্যামল ছায়ায় ঘেরা ছিল এ পার্ক। পাতাবাহার, ঝাউগাছে ও বিভিন্ন ফুলের সমারোহে ও বৈদ্যুতিক লাইটের বাহারী স্বাজে সাজানো ছিল লেকের চারপাশ। বিশাল হ্রদের উপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতু পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো কয়েক গুন। লেকের পানিতে ছিলো কয়েকটি বোর্ট যা পর্যটকদের আনন্দকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতো। এসব দৃশ্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসত দর্শনার্থীরা। বর্তমানে তার পুরটাই উল্টো। চারোদিকে সবুজের সমরোহ এখন আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পার্কটি। কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে ঝুলন্ত সেতু। অন্যদিকে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রামগড় স্মৃতিসৌধ টি এক প্রকার ধ্বংসের প্রান্তে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে এটি। রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিনিত হয়। কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। আশপাশের স্থানীয়রা এটিকে গো-চারণ ভূমি বানিয়েছে। স্মৃতিসৌধের মত একই দশা কালাডেবায় অবস্থিত সুইসগেইটের। এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ এই পর্যটন কেন্দ্রটি এক প্রকার পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণেরর অভাবে সরঞ্জাম গুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে।
রামগড় পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক আল আমিন জানান, অতিতের ছবি ও সুনাম শুনে স্কুলের বাচ্চা ও সন্তানদের নিয়ে রামগড় ঘুরতে এসেছেন। রামগড়ের আগের সৌন্দর্য আর নেয়। তাছাড়া এখানে ভাল গণশোচাগার ও থাকার ভাল কোন ব্যবস্থাও নেই। যার ফলে একটু পরই খাগড়াছড়ি সদরের দিকে রওনা হবেন।
রামগড় উপজেলার বাসিন্দা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অরুণ চন্দ্র সিংহ জানান, রামগড় পর্যটনমুখর শহর ছিলো। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মানুষ রামগড় মুখী হচ্ছেনা।কতৃপক্ষ চাইলে রামগড়ের সুখ্যাতি আবার ফিরিয়ে আনতে পারে। তিনি আরো জানান, দল মত নির্বিশেষে রামগড়ের জনপ্রতিনিধিদের উচিত রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এক হওয়া জরুরী। সুপরিকল্পিত ভাবে রামগড় নিয়ে কাজ করলে রামগড় খুব দ্রুত আগের সুখ্যাতি ফিরে পাবে।
রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান, রামগড় পার্ক আগে পৌরসভার নিয়ন্ত্রনে ছিলো।কিন্তু ভূমি জটিলতায় উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রনে এখন। পৌরসভার যথেষ্ট লোকবল আছে। রামগড় পার্ক পৌরসভার দায়িত্বে দিলে পুনরায় ঢেলে সাজানো হবে। তিনি আরো জানান, রামগড় পরিত্যাক্ত বাস টার্মিনালটি মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এটি শিশু ও কিশোরদের বিনোদনের উপযোগী করার জন্য আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।
রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো: ইখতিয়ারউদ্দিন আরাফাত জানান, প্রশাসনের সামনে এমন মনোরম লেক তাকে মুগ্ধ করেছে। লেকটির সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মধ্যে জেলা প্রশাসনকে অবগত করেছেন।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে রামগড়ের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। রামগড়ের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র আধুনিক সাজসজ্জায় সাজানো হবে। তিনি আরো জানান, রামগড়ে সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ নির্মাণ হচ্ছে। নকশা পরিবর্তনের জন্য কিছুটা থমকে আছে। উন্নত মানের হোটেল নির্মাণের জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
###
০১৭৩৬৫০৯৯৭২, তারিখ- ২৭/০৯/২০২২ইং।
Leave a Reply