সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব; ধ্বংশ হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ভৌগলিক পরিবেশ

রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব; ধ্বংশ হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ভৌগলিক পরিবেশ

রামগড় প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।

জানা যায়, রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা নদী ছড়া খাল-বিল ও কৃষিজ জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অবাধে সারা বছরব্যাপী বালু উত্তোলন করছে। ফলে ক্ষিতিগ্রস্থ্য হচ্ছে সড়ক, ফসলি জমিসহ জীব বৈচিত্র আর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সত্যিকারের সক্রিয়তা চান এলাকাবাসী।

এদিকে, সম্প্রতি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রসঙ্গটি সভায় ওঠে আসলে বক্তারা এ অপতৎপরতা বন্ধের দাবি সহ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে রাস্তা-ঘাট রক্ষায় প্রশাসনকে আরো কঠোর আইন প্রয়োগের অনুরোধ করেন।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো.শাহ আলম বলেন, মাসিক আইন শৃংখলা সভায় প্রতিবারই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছি। এ ধরণের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা হলে রামগড়ের ভৌগলিক পরিবেশ বদলে যাবে ও মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

ভূমি অফিসের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, উপজেলার তৈচালা ও সোনাইছড়ি খাল এবং পিলাক নদীর অন্তুপাড়া ও বৈদ্যপাড়া এ ৪টি সরকারীভাবে ইজারাকৃত বৈধ বালুমহাল। তবে এসমব মহালেরও সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি এর বাইরের বাকী সবগুলো ইজারাবিহীন অবৈধ। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে যৎসামান্য ব্যবস্থা নিলেও কার্যত ফলপ্রসু হচ্ছেনা।

জানা যায়, প্রশাসন কর্তৃক ৪টি ইজারাকৃত খালের বাইরে আরও অর্ধশতাধিক অবৈধ ঘাট রয়েছে যেখান থেকে প্রতিনিয়ত বালু পাচার হচ্ছে। আবার বৈধগুলোরও একজায়গার কথা বলে দশ জায়গায় বালু উত্তোলন করছে। ইজারার শর্ত ভেঙে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত হারে বালু নিয়ে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। খাগড়াবিল ও নতুনপাড়া সড়ক হয়ে প্রতিদিন ৩০-৪০টি বালুভর্তি ট্রাক খাগড়াবিল বাজারের আগে আটকা পড়ে সড়ক বন্ধ হয়ে যায় এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাতায়াতকারীদের। রাস্তা এতোটাই খারাপ করা হয়েছে এলাকায় জনভোগান্তির আরেক নাম এখন বালুবাহিত ট্রাক। এখানে বেশকয়েকটি অবৈধ বালুমহাল আছে। রামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড লালছড়ি, ৮ নম্বর ওয়ার্ড নোয়াপাড়া (বর্মাটিলা রোড), ৯ নম্বর ওয়ার্ড নব্বই একর, রুপাইছড়ি, পাতাছতড়া অনেকেই এখানে জড়িত থাকার কথা স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে রুপাইছড়ি তাঁরাচান পাড়া, লালছড়ি, লামকুপাড়া, বাগানটিলা, সোনাইআগা গেলে এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বালু খেকোরা রাস্তা-ঘাট, ধানিজমি, কালভার্ট ধংস করছে। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। অধিকাংশ বালু মহাল ব্রীজ ও কালভার্ট সংলগ্ন এবং ধান্যজমি পরিশোধিত করে শেলো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। পাতাছড়া ইউনিয়নের যৌথখামার হয়ে বাজার চৌধুরী ঘাটে ৫টি অবৈধ বালুমহাল আছে। এই জায়গাটা বেশ দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারি নেই। এই ৫টি ঘাট নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজন সহ পরিচিত কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি।

গতকাল সর্বশেষ রামগড় ইউনিয়নের রুপাইছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০হাজার ঘনফুট বালু ও দুটি শেলো মেশিন সহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানস চন্দ্র দাস। এরআগে ৩১আগষ্ট পাতাছড়া ইউনিয়নের ধামাইপাড়ার হাসানরাজা ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বিপুলপরিমাণ বালু ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করেন। এ ঘাটটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সদস্য আবদুল লতিফের তিনি ইজারাবিহীন বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত । এর আগে ৯ আগষ্ট রামগড় ইউনিয়নের লামকু পাড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় মুজিবুর রহমান সুমন নামে এক ব্যক্তিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সরেজমিনে রামগড়ের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে জানা যায়, ড্রেজার মেশিন ও বালি পরিবহনে ব্যবহৃত ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টরের বিকট শব্দে এলাকাবাসী এখন অতিষ্ঠ। যত্রতত্র বালু উত্তোলন জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। রাত-দিন সবসময় চলে এই অবৈধ বালু পাচারের উৎসব। ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, সেতু-কার্লভাট, নষ্ট হয়ে ক্রমান্বয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে ধুলোবালির স্তুপ আবাসিক এলাকার বায়ুদূষণসহ সার্বিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, “রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, রামগড়ে ইজারাকৃত বালু মহাল ৪টি অন্যসব মহাল অবৈধ। এসব অবৈধ বালু মাহালের সাথে জড়িত ব্যক্তির দায় দল নেবে না। অবৈধ কাজে বিরত থাকতে দলীয়ভাবে সবসময় বলা হয়। তারপরও কেউ বেআইনী কাজে জড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ সমর্থন বা সহযোগিতা দেবে না। ইজারাবিহীন বালুমহাল বন্ধ করা প্রশাসনের দায়িত্ব।”

রামগড় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সজেকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মানস চন্দ্র দাস বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা নজরে এলে বা অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে ।

করিম শাহ, রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি:

ভাল লাগলে সংবাদটি শেয়ার করুন........

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদিত... © কর্তৃপক্ষদ্বারা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত |২০২০|
Design & Developed BY CHT Technology